সৌদি আরবের রাজতন্ত্র ও আধুনিক ইতিহাসে ব্রিটিশদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সৌদি রাজপরিবার ও ব্রিটিশ সরকার (এবং একাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এর মধ্যে সংঘটিত প্রধান চুক্তি ও ঐতিহাসিক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. দারিন চুক্তি (Treaty of Darin) – ২৬ ডিসেম্বর ১৯১৫
পক্ষ: ব্রিটিশ সরকার ও আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ (নজদের নেতা)
পটভূমি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে আরবদের সহায়তা চাইছিল। ইবনে সৌদ ছিলেন ব্রিটিশদের মিত্র।
চুক্তির শর্ত:
- ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে “প্রটেক্টরেট” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- ইবনে সৌদকে আর্থিক অনুদান ও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
- ইবনে সৌদ ওয়াহাবি অঞ্চলে তার কর্তৃত্ব বজায় রাখবেন এবং ব্রিটিশদের শত্রুদের সাহায্য করবেন না।
২. ম্যাকমাহন–হুসেইন চিঠিপত্র – ১৯১৫–১৯১৬
পক্ষ: স্যার হেনরি ম্যাকমাহন (ব্রিটিশ হাইকমিশনার, মিশর) ও শরীফ হুসেইন ইবনে আলী (মক্কার হাশেমি নেতা)
মূল প্রতিশ্রুতি: অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিনিময়ে আরবদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রভাব: যদিও এটি সরাসরি সৌদি রাজপরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করে না, তবে হুসেইনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইবনে সৌদ। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।
৩. জেদ্দা চুক্তি – ২০ মে ১৯২৭
পক্ষ: যুক্তরাজ্য ও আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ (হিজাজ ও নজদের রাজা)
পটভূমি: ১৯২৫ সালে হিজাজ জয় করার পর ইবনে সৌদ নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
চুক্তির শর্ত:
- ব্রিটিশরা সৌদি আরবের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি দেয়।
- সৌদি আরব উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা ও ব্রিটিশ স্বার্থে হস্তক্ষেপ করবে না।
- দাসপ্রথা বন্ধে প্রতিশ্রুতি প্রদান।
৪. রুজভেল্ট–ইবনে সৌদ বৈঠক – ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫
পক্ষ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ও রাজা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
বৈঠকের বিষয়:
- ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা
- সৌদি আরবের বিরোধিতা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং সৌদি আরবকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
- সৌদি–মার্কিন তেল ও সামরিক সম্পর্কের সূচনা ঘটে।
এই চুক্তিগুলো ছিল মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ভূরাজনৈতিক মানচিত্রের ভিত্তি। সৌদি রাজতন্ত্রের উত্থান, ব্রিটিশ প্রভাব, ফিলিস্তিন সংকট এবং পরবর্তীতে মার্কিন সম্পৃক্ততা—সবই এইসব ঐতিহাসিক চুক্তি ও বৈঠকের ফলাফল।
এই ঘটনাগুলো বোঝা মধ্যপ্রাচ্যের সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুধাবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।