ফিলিস্তিনে হামলার পেছনে ইসরায়েলের কৌশল: ব্যস্ত মুসলিম বিশ্ব ও নিঃশব্দ প্রতিবাদ
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। একদিকে গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে সামরিক অভিযান, অন্যদিকে মুসলিম দেশগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, “মুসলিম দেশগুলোকে ব্যস্ত রেখে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।” এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করবো কীভাবে এই স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা কতটা দুর্বল বা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছে।
মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ সংকট
দেশ | সংকট |
---|---|
ইরান | অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলের সাথে ছায়াযুদ্ধ |
সৌদি আরব | Vision 2030 রূপান্তর, ইয়েমেন যুদ্ধ, পশ্চিমা ঘনিষ্ঠতা |
পাকিস্তান | রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা |
তুরস্ক | মুদ্রাস্ফীতি, কুর্দি সংকট, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান |
বাংলাদেশ | রাজনৈতিক উত্তেজনা(গোপালগঞ্জ ইস্যু), সেটা ঢাকতে বিমান বিধ্বস্ত ইস্যু, বিরোধী কণ্ঠ দমন এবং নির্বাচনী প্রশ্নবিদ্ধতা |
মিশর | মূল্যস্ফীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সেনা-শাসন |
আফগানিস্তান | তালেবান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয় |
ইসরায়েলের কৌশল: Divide, Distract and Dominate
- মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে কাজে লাগানো
- আরব রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুকে পেছনে ফেলা
- গাজা আগ্রাসনের সময় এমনভাবে নির্বাচন করা, যখন মুসলিম দেশগুলো নিজেদের সমস্যায় ব্যস্ত
- যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বকে কৌশলগতভাবে পাশে রাখা
আরব সরকারগুলোর নীরবতা বনাম জনগণের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকারগুলো যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, বাহরাইন— এসব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অধিকাংশ সময় তারা নরম ভাষার বিবৃতি দেয়।
অন্যদিকে, সাধারণ জনগণ বিশেষ করে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিনের প্রতি তীব্র সহানুভূতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় #FreePalestine ট্রেন্ডিং হয়েছে বহুবার, কিন্তু সরকারিভাবে বড় কোনো কূটনৈতিক অবস্থান দেখা যায়নি।
মুসলিম বিশ্বের ঐক্যহীনতা ও OIC-এর ব্যর্থতা
Islamic Cooperation সংস্থাটি (OIC) দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বরং এরা এখন প্রতিক্রিয়াশীল বিবৃতি ও নিঃসার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
একটি শক্তিশালী মুসলিম ঐক্য যদি থাকতো, তবে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক চাপ এবং জাতিসংঘে সমন্বিত অবস্থান তৈরি করা যেত। কিন্তু বাস্তবে আমরা ঠিক উল্টোটা দেখছি।
ইসরায়েলের লাভ কী?
কৌশল | ইসরায়েলের সুবিধা |
---|---|
আক্রমণের সময় নির্বাচন | বিশ্ব মনোযোগ বিভক্ত থাকে |
মুসলিম দেশের দুর্বলতা কাজে লাগানো | কোনো সামরিক প্রতিরোধ হয় না |
আরব রাষ্ট্রের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক | সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক চাপ কমে যায় |
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন | সামরিক ও কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় |
বাংলাদেশের অবস্থান: নীরব কূটনীতি নাকি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা?
বাংলাদেশের সরকার ফিলিস্তিনের পক্ষে বারবার নৈতিক সমর্থন দিলেও কূটনৈতিক পর্যায়ে দৃশ্যমান চাপ কিংবা পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এর কারণ হতে পারে:
- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা
- অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও স্থিতিশীলতার অভাব
- OIC-এর ব্যর্থ নেতৃত্বের ছায়ায় অবস্থান গ্রহণ
“ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচার, ঐক্য ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।”
ইসরায়েল কৌশলে মুসলিম বিশ্বের সংকটকে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিনে বারবার আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এ এক পরিকল্পিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ কূটনৈতিক অভিযান। অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে কার্যকর অবস্থান নিতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে জনগণের দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ রাষ্ট্রের নীরবতা ইতিহাসে সঠিক উত্তর দিতে পারবে না, কিন্তু জনগণের অবস্থান তা পারে।